দণ্ডিতের সাথে দণ্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে, সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার | ভাব সম্প্রসারণ

দণ্ডিতের সাথে দণ্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে,সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার ।

মূলভাব : যে বিচারের সময় দণ্ডিতের সাথে দণ্ডদাতাও বেদনায় নীল হয়ে যান সে বিচারই শ্রেষ্ঠ ও ন্যায়বিচার । ন্যায়বিচারে বিচারককে থাকতে হয় নিরপেক্ষ ।

সম্প্রসারিত ভাব : আইনের চোখে সবাই সমান । তাই আইনের শাসন প্রয়োগকারী বা বিচারককে থাকতে হয় সম্পূর্ণরূপে নিরপেক্ষ । নিরপেক্ষভাবে বিচারকার্য সম্পন্ন করতে গিয়ে বিচারককে হতে হয় কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি । কখনও কখনও দণ্ডিতের সাথে সম্পর্ক , দণ্ডপ্রাপ্তের বয়স প্রভৃতি বিচারককে মানসিক দ্বন্দ্বে ক্ষত - বিক্ষত করে তোলে । কিন্তু সত্যাশ্রয়ী বিচারক মানসিকভাবে যত বিপর্যস্তই হোন , আবেগে যতই উদ্বেলিত হোন না কেন তিনি অন্যায়কারীর প্রাপ্য শাস্তি দেবেনই । কেননা , সামাজিক শান্তি - শৃঙ্খলা ও মানুষের অধিকার সংরক্ষণে তাঁর দায়িত্ব অপরিসীম । উপযুক্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা থাকলে সমাজের খারাপ লোকেরা বাধ্য হয়েই সংযত জীবনযাপন করে । পক্ষান্তরে , সামাজিক প্রতিপত্তি বা ক্ষমতাসীনদের প্রত্যক্ষ আশীর্বাদে যদি কোনো অপরাধীর বিচার বা শাস্তি না হয় তাহলে সমাজে অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পায় । সেজন্যে দায়িত্বশীল বিচারক আবেগতাড়িত হন না । পুত্র আবু শাহমার বিরুদ্ধে মদ্যপান ও ব্যভিচারের অভিযোগ ওঠে । হযরত উমর ( রা ) নিজে পুত্রের শাস্তিবিধান করেন । নিজ হাতে বেত্রদও চালিত হন ন্যায় ও আইন দ্বারা । হযরত উমর ( রা ) -এর প্রয়োগের মাধ্যমে তিনি পুত্রের প্রাণ সংহার করেন । প্রিয় পুত্রের অকালমৃত্যুতে তাঁর হৃদয় ক্ষত - বিক্ষত হয়েছিল সত্য , কিন্তু পুত্রস্নেহ তাকে ন্যায়বিচার থেকে বিরত রাখতে পারে নি । তাই যখন দণ্ডিতের সাথে সাথে দণ্ডদাতাও কাঁদেন তখনই প্রকৃত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয় ।

মন্তব্য : বিচারকের দায়িত্ব সুকঠিন বলেই তিনি সমাজের শ্রেষ্ঠ মর্যাদার আসনে সমাসীন । দণ্ডিতের প্রতি বিচারকের সমবেদনা থাকতেই পারে , কিন্তু তা যেন তার প্রাপ্ত দণ্ডকে লঘু না করে ।

ভিডিও দেখুন



আরো পড়ুন: