ভাব সম্প্রসারণ: পথের প্রান্তে আমার তীর্থ নয় পথের দু ধারে আছে মোর দেবালয়

পথের প্রান্তে আমার তীর্থ নয়
পথের দু ধারে আছে মোর দেবালয়।

মূলভাব : বৈরাগ্য মানুষের জীবনকে অর্থবহ করে না । মানবসমাজকে ছেড়ে বৈরাগ্য গ্রহণে পরমারাধ্য যে জন , তাকে পাওয়া যায় না । কারণ তিনিও থাকেন মানুষের মধ্যেই ।

সম্প্রসারিত ভাব : মানুষ পরম প্রভুর বেছে নেয় অনেকেই । বৈরাগ্য সান্নিধ্য চায় । তাকে পেতে অনেকেই বেছে নেয় বৈরাগ্য । লোকালয় ছেড়ে বনে - প্রান্তরে নিঃসঙ্গ জীবন নৈরাশ্য ছাড়া আর কিছুই মানুষকে দিতে পারে না । অধরাই রয়ে যায় পরমারাধ্য প্রভু । কেননা পরম সৃষ্টিকর্তাই বৈরাগ্য চান না । তিনি মানবসমাজসহ সমগ্র সৃষ্টিজগৎকে তার পরিজন হিসেবে সৃষ্টি করেছেন । প্রকৃতির মধ্যে নিজের স্বরূপ সুষমা ছড়িয়ে দিয়েছেন । মানুষের আত্মাকেই করে নিয়েছেন নিজের অদৃশ্য আসন । তাই যারা প্রকৃত জ্ঞানী তারা পরমেশ্বরকে খুঁজতে লোকালয় ছেড়ে বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ান না । মানুষে মানুষে ভালোবাসা - বাসিতে খুঁজে নেন ঈশ্বরের সান্নিধ্য । পরম প্রভু নিজেই বাংলে দিয়েছেন তাকে পাবার পথ , মুক্তির উপায় । সে কথা বুঝতে পেরেই প্রকৃত জ্ঞানীরা উচ্চারণ করেন—

“ বৈরাগ্য সাধনে মুক্তি
সে আমার নয় । "

মানুষের কুঁড়েঘরই আসল দেবালয় , মানুষের হৃদয়লোকই আসল দেবাসন । অতএব আমরা যারা প্রকৃত মুক্তি চাই , আধ্যাত্মিক জগতের পূর্ণতা চাই তাদের জন্য জীবন চালানোর প্রবণতা পরিত্যাগ করতে হবে । জীবনে উপভোগ করে , মানুষের হৃদয়লোকের সন্ধান করে , পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির মধ্যদিয়েই পেতে হবে মুক্তির আস্বাদ । জীবের সেবা করাই যে স্রষ্টাকে পাবার একমাত্র পথ সেটা আমাদের বুঝতে হবে । পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ হযরত মুহম্মদ ( স ) স্পষ্টই ঘোষণা করেছেন— “ ইসলামে বৈরাগ্যের স্থান নেই । ”

মন্তব্য : ঈশ্বরকে পেতে হলে প্রথমেই তাঁর সৃষ্টিকে ভালোবাসতে হবে । মানুষ তাঁর উৎকৃষ্ট সৃষ্টি । মানুষের সেবাই প্রকৃত উপাসনা । মানুষই শ্রেষ্ঠ দেবালয় ।

ভিডিও দেখুন



আরো পড়ুন: