ভাবসম্প্রসারণ : কাক কোকিলের একই বর্ণ ঘরে কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন | কাক কালো কোকিল কালো, কেউ বলে না কাক ভালো

কাক কোকিলের একই বর্ণ ঘরে কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন ।

অথবা,
কাক কালো কোকিল কালো, কেউ বলে না কাক ভালো।

মূলভাব : বর্ণ ও আকৃতির সাদৃশ্য থাকলেও সকল বস্তুর মূল্য একই রকম নয় । বর্ণ বা রূপ বড় কথা নয় ; বড় কথা হলো গুণ ।

সম্প্রসারিত ভাব : কাক ও কোকিল একই বর্ণের । উভয়ই কালো । কিন্তু তাদের এই বর্ণগত সাদৃশ্য উভয়ের সমান মূল্য নির্ধারণে ব্যর্থ হয়েছে । কাক কুৎসিত পাখি হিসেবে ঘৃণিত । শুধু তাই নয় , কর্কশ স্বরধ্বনির কারণে কাক অশুভ শক্তির প্রতীক । কাকের পরিবেশগত উপযোগিতা থাকলেও গলার আওয়াজের কারণে এ প্রাণীটি পরিত্যাজ্য । অপরদিকে কোকিল কাকের মতোই কালো বর্ণের হলেও সুমিষ্ট কণ্ঠধ্বনির কারণে সে সকলের প্রিয় । অথচ পরিবেশগত দিক দিয়ে কোকিলের চেয়ে কাক অধিক উপকারী । এমনকি কোকিল নিজে বাসা পর্যন্ত বাঁধতে পারে না । কাকের বাসাতেই সে ডিম পাড়ে । কাকের হাতেই কোকিল শাবক লালিত - পালিত হয় । তা সত্ত্বেও কোকিল সবার প্রিয় । কোকিলের প্রতি মানুষের আকর্ষণের কারণ মনোমুগ্ধকর ডাক । কুহু কুহু ডাকে সে মানুষকে বিমুগ্ধ করে । কুহুতানের মনোরম আমেজ কোকিলের কৃষ্ণবর্ণকেও সুন্দর করে তুলেছে । আমাদের সামাজিক ক্ষেত্রেও একই রকম চিত্র দেখতে পাই । একই রকম গাত্রবর্ণ বা শারীরিক সৌন্দর্য হওয়া সত্ত্বেও সকল মানুষের গ্রহণযোগ্যতা একই রকম নয় । যাদের মুখের ভাষা সুমিষ্ট নয় তাদের প্রতি মানুষের কোনো আকর্ষণ থাকে না । উপরন্তু তাদের মানুষ অবজ্ঞা করে , এড়িয়ে চলে । সমাজে তাদের অবস্থান উচ্চে হয় না । সর্বদাই তারা পরিত্যাজ্য , ঘৃণিত । পক্ষান্তরে শারীরিকভাবে সুন্দর না হলেও যাদের মুখের বাণী মিষ্টি এবং হৃদয়গ্রাহী তাদের সবাই ভালোবাসে , কাছে টেনে নেয় । তারা সকলের শ্রদ্ধা ও সহৃদয় অভ্যর্থনায় অভিষিক্ত হয় । শুধুমাত্র সুমিষ্ট ভাষার গুণেই তারা সমাজে উচ্চাসন পায় । কাজেই মানুষের জীবনে ভাষার গুরুত্ব অত্যধিক ।

মন্তব্য : মানুষের জীবনে সুমিষ্ট কথা ও আচরণের মূল্য অনেক । তাই আমাদের সবার উচিত নিজ নিজ ভাষাকে পরিশীলিত , সুমিষ্ট ও সুললিত করে তুলতে সচেষ্ট হওয়া।

ভিডিও দেখুন



আরো পড়ুন: