বাংলা বানানের নিয়ম বা সহজ বানান পদ্ধতি | বাংলা ব্যাকরণ

সহজ বানান পদ্ধতি

বাংলা ভাষায় চার প্রকারের শব্দ আছে । যথা- তৎসম , তদ্ভব , দেশী ও বিদেশী । এগুলাের মধ্যে তৎসম বা সংস্কৃত শব্দের বানান সুনির্দিষ্ট কেননা এর বানানে কোন বিকৃতি ঘটেনি । কিন্তু তদ্ভব , দেশী ও বিদেশী শব্দসমূহের বানান আধুনিক বাংলায় নানারূপ পরিবর্তন ঘটেছে । বাংলাভাষায় জটিল শব্দগুলাে বানান পদ্ধতি নিম্নভাবে সহজ করা হয়েছে :-

তৎসম বা সংস্কৃত শব্দ সম্বন্ধে দুটি নিয়ম আছে

( ক ) রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব বা দু'বার প্রযুক্ত হবে না । যেমন- ধর্ম , কর্ম , কর্তা , অর্ধ , মুর্ছা , ফর্সা ইত্যাদি ।

( খ ) ক, খ, গ, ঘ পরে থাকলে পদের অন্তস্থিত ‘ ম ' এর স্থলে অনুস্বার বা বিকল্পে ঙ হয় । যেমন – অহংকার বা অহঙ্কার , অংকুরোদগম বা অঙ্কুরােদগম , হৃদয়ংগম বা হৃদয়ঙ্গম ।

অংস্কৃত শব্দে নিম্নবর্ণিত নিয়মগুলাে প্রযােজ্য

( ক ) যদি সংস্কৃত শব্দে ‘ ঈ ’ বা ‘ উ ' থাকে , তবে যেসব শব্দ মূল সংস্কৃত হতে রূপান্তরিত হয়ে বাংলা ভাষায় প্রচলিত হয়েছে , তাতে বিকল্পে ঈ স্থলে ই , ঊ স্থলে উ হবে । যেমন - ঊনবিংশ , ঊনত্রিশ , কুম্ভীয় , পক্ষী , চূর্ণ পূর্ব এগুলাের তদ্ভব বাংলা শব্দ ঊনিশ বা উনিশ , কুমীর বা কুমির ‘ পাখী বা পাখি , চূন বা চুন , পূব বা পুব ।

কিন্তু কতকগুলাে শব্দে কেবল ঈ , ই বা উ হবে । যেমন- হীরা , হীরক , খিল ( খীল ) ।

( খ ) স্ত্রীলিঙ্গ এবং জাতি , ব্যক্তি , ভাষা ও বিশেষণবাচক শব্দের অন্তে ঈ হবে । যেমন- গােয়ালিনী , বাঘিনী , ঢাকী , রেশমী , বাঙালী , ইংরেজী , আরবী , ফারসী ইত্যাদি । তবে অতি আধুনিক বাংলাভাষায় ঈ - কারের প্রয়ােগের স্থলে অনেক বানানে ই - কারের প্রয়ােগ প্রচলিত হয়েছে । যেমন — বাঙালি , ইংরেজি , আরবি , ফারসি , খুশি , বেশি , বাড়ি ইত্যাদি ।

কিন্তু ঝি , বিবি , দিদি , কচি , মিহি ই - কারান্ত হবে । আবার পিসী , মাসী বা পিসি , মাসি উভয়ই চলতে পারে ।

( গ ) অন্য অসংস্কৃত শব্দে কেবল ই হবে । যেমন- বেঙ্গাচি , বেজি , মাটি , বিড়ি ইত্যাদি । অব্যয় হলে কি এবং সর্বনাম হলে বিকল্পে কী বা কি হবে । যেমন - তুমি কি বাজারে যাবে ? তুমি কী ( বা কি ) বাজারে যাবে ?

( ঘ ) মূল সংস্কৃত শব্দ অনুসারে তদ্ভব শব্দে শ , ষ , স হবে। যেমন– অংশ , আঁশ , শস্য , শীস , মশক , মশা ইত্যাদি বিদেশী শব্দের মূল উচ্চারণ অনুসারে S- এর স্থলে স এবং sh- এর স্থলে শ হবে । যেমন- আসল , জিনিস , সাদা , সবুজ , মাসুল , মসলা , শহর , খুশী , পােশাক , শার্ট , শরবৎ ইত্যাদি ।

( ঙ ) অসংস্কৃত শব্দের সর্বত্রই ' ন ' হবে । যেমন- সােনা , কান , নাক , ইত্যাদি । তবে রানী ’ স্থলে বিকল্পে ‘ রাণী ' হতে পারে ।

( চ ) অসংস্কৃত শব্দেরও রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না । যথা – কর্জ , সর্দার , জার্মানী , শর্ত , পর্দা ইত্যাদি

( ছ ) শব্দের শেষে সাধারণত হসন্ত চিহ্ন বসে না । যেমন- ওস্তাদ , সন্তান , জজ ইত্যাদি । কিন্তু বানানটি যদি এমন হয় যে , ভুল উচ্চারণের সম্ভাবনা থাকে , তবে হসন্ত চিহ্ন দেয়াটাই সমীচীন । মধ্যবর্ণে প্রয়ােজন হলে হসন্ত চিহ্ন দিতে হবে ।

নিম্নের বানানগুলাে লক্ষণীয়

( ক ) রং বা রঙ , বাংলা বা বাঙলা বা বাঙ্গলা , বাঙালী বা বাঙ্গালী উভয়ই চলে । তবে আঙুল , রঙ ইত্যাদিতে ' ঙ ' ব্যবহার করাই সমীচীন । আঙ্গুল , রঙ্গ ইত্যাদি বানান বিধেয় নয় ।

( খ ) কাল বা কালাে ( কৃষ্ণ রঙ বুঝতে ) , কিন্তু কাল ( কল্য , সময় ) , ভাল বা ভালাে , মত বা মতো ।

( গ ) এক ঘরে , কটমট , ঝড়াে , জলাে ইত্যাদি শ , ষ , স মূলশব্দ অনুযায়ী বাংলা শব্দেও প্রয়োগ হয় ।

বাংলা স্ট ’ যুক্তাক্ষর পূর্বে ছিল না , এ কারণে ইংরেজী শব্দের sht থাকলে স্ট - এর স্থলে “ ষ্ট ' লেখা হতাে । কিন্ত ‘ স্ট মুদ্রাক্ষর চালু হওয়ায় ইংরেজী sht- এর পরিবর্তে st অর্থাৎ ' ষ্ট ' লেখার প্রচলন আর নেই । যেমন- মাস্টার , পােস্ট অফিস , মিস্টার , সিস্টার , স্টেশন ইত্যাদি ।


আরো পড়ুনঃ