ভাব-সম্প্রসারণ: মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে , মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই

মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে, মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই ।

মূলভাব : এ পৃথিবী বড়ই মায়াময় । বড়ই সুন্দর । কিন্তু মানুষের জীবন সংক্ষিপ্ত । মানুষের ভালোবাসায় প্রকৃতির সৌন্দর্য কোলে যে মায়ার বন্ধন রচিত হয় তা ছেড়ে মানুষকে পরপারে চলে যেতেই হয় ।

সম্প্রসারিত ভাব : পরম করুণাময় আল্লাহপাক সৌন্দর্যের সুষমা ঢেলে এ পৃথিবীকে সার্থক করেছেন । প্রকৃতি ও নিসর্গ নিচয়ে যে সৌন্দর্য বিচ্ছুরিত তার একমাত্র উপভোগকারী মানুষ । একমাত্র মানুষের মধ্যেই রয়েছে সৌন্দর্য চেতনা , সৌন্দর্য পিপাসা । মানুষ এ পৃথিবীর রূপ ও রস থেকে নিজের মনন ও সুকুমার চেতনাকে তৃপ্ত করে । বিস্তৃত সবুজ প্রান্তর , বন - বনানীর সমারোহ , নদীর বয়ে চলা , সমুদ্রের দৃষ্টি ছাড়ানো উদারতা , ঝর্নার উদ্বেল উত্তাল ছুটে যাওয়া সবকিছু দেখে মানুষের মন ভরে যায় । একই সাথে আছে মানুষের মানবিক চেতনা , নানারূপ সামাজিক সম্পর্কের প্রেরণা । পিতামাতা , ভাই - বোন , সন্তান - সন্ততি সবাইকে নিয়ে মানুষ যে জীবন রচনা করে তা ছেড়ে কারো কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না । মানুষের প্রতি মানুষের অগাধ ভালোবাসা - বাসিতে জীবনে যে স্বরূপটি বৃহত্তর পরিসরে পরিব্যাপ্ত হয়ে উঠে তা আরও সুন্দর । মানুষের মধ্যেই মানুষ খুঁজে পায় তার জীবনের অর্থ । এ যেন এক স্বর্গীয় সুখ , অনাস্বাদিতপূর্ব সুখ । কিন্তু প্রকৃতি বড়ই নির্মম । কাঠুরিয়ার মতো সময়ের বৃক্ষ থেকে একটি একটি করে মুহূর্তের ডাল ঝরিয়ে দেয় । এক পর্যায়ে জীবন বৃক্ষের গোড়াতেই কোপ বসিয়ে দেয় । মানুষকে ছেড়ে যেতে হয় ক্ষুদ্র জীবনের সীমা ছাড়িয়ে অসীম লোকের সন্ধানে । মৃত্যু অনিবার্য । তাই যারা জ্ঞানী ও ধ্যানী তারা মৃত্যুকে অস্বীকার করতে চান নি । যদিও জীবনের মায়া অসীম , এ ব্যাপারে তাঁদেরও কোনো প্রশ্ন নেই । অনিবার্যতাকে অস্বীকার না করে তারা তাই মানুষের মাঝেই নিজের কীর্তি ও সৃষ্টিকর্ম দ্বারা অন্তহীনকাল বেঁচে থাকতে চেয়েছেন । এই বেঁচে থাকবার প্রত্যয় নিয়েই জীবনপিয়াসী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অবশেষে মরণকে শ্যাম সমান বলে গ্রহণ করে বলেছেন , ' মরণ রে , তুতু মম শ্যাম সমান । '

মন্তব্য : মানুষ মরণশীল বলে একসময় এই পৃথিবী থেকে চির বিদায় গ্রহণ করতে হয় । অবশ্যম্ভাবী এই পরিণাম জেনেও মানুষ এই পৃথিবীর রূপ - রস - গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর কথা ভুলে আমৃত্যু বেঁচে থাকতে চায় ।