প্রবন্ধ রচনা: গ্রাম্য মেলা | একটি গ্রাম্য মেলা রচনা

গ্রাম্য মেলা

এছাড়াও আরো যেসকল বিষয় সম্পর্কে লিখতে পারবে:
👉গ্রামের মেলা
👉গ্রামীণ ঐতিহ্য: মেলা
👉মেলা
👉গ্রামীণ জীবনের মেলার গুরুত্ব

ভূমিকা :

‘ মেলা ’ শব্দের অর্থ মিলিত হওয়া । মেলা আবহমান গ্রামবাংলার অন্যতম সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য । সাধারণত বছরের শেষে অথবা বছরের শুরুতে নয়তো বিশেষ কোনো পর্ব উপলক্ষে মানুষজন একটি বিশেষ স্থানে একত্রিত হয়ে নানা উৎসব আয়োজনের মাধ্যমে উদ্যাপিত একটি বিশেষ সম্মিলনকে মেলা বলে । যেকোনো মেলাই আনন্দ আয়োজনের একটি উৎস ।

মেলার উপলক্ষ :

যেকোনো মেলাই একটি বিশেষ উপলক্ষকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত হয় । গ্রামে সাধারণত ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে মেলা অনুষ্ঠিত হয় । পহেলা বৈশাখ , রথযাত্রা , জন্মাষ্টমী , বিজয়া দশমী , দশই মহররম , চৈত্র সংক্রান্তি এসব উৎসবকে কেন্দ্র করে অধিকাংশ মেলা বসে থাকে । তবে উপলক্ষ যাই হোক না কেন মেলা বাঙালি সমাজ - সংস্কৃতি ও মানুষের নিকট খুব জনপ্রিয় ও আনন্দের দিন । বাংলাদেশে প্রচলিত মেলাগুলোর কোনোটি একদিন , কোনোটি এক সপ্তাহ , কোনোটি পনের দিন আবার কোনো কোনো মেলা এক মাসব্যাপী চলতে থাকে ।

গ্রাম্য মেলার স্থান :

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের মেলা বসে । মেলা বসার জন্য হাট - বাজারের ন্যায় নির্দিষ্ট কোনো স্থান নির্ধারিত থাকে না । সাধারণত গ্রামের কেন্দ্রস্থলে খোলা মাঠে , মন্দির প্রাঙ্গণে , নদীর তীরে অথবা বটবৃক্ষের নিচে গ্রাম্য মেলা বসতে দেখা যায় । ঐতিহ্য অনুযায়ী এসব স্থানে মেলার আয়োজন করা হয় । মেলার স্থানে সাময়িকভাবে দোকানপাট বসার মতো চালা নির্মাণ করা হয় । মেলা শেষ হওয়ার পর এগুলো ভেঙ্গে ফেলা হয় । বছরের শেষে মেলার আনন্দে আবারও মুখরিত হয়ে ওঠে মেলার সে স্থান ।

মেলার প্রস্তুতি :

কোনো দিন মেলা বসবে তা এলাকার লোকেরা আগে থেকেই জানে এবং সে অনুসারে তাদের প্রস্তুতি চলে । গ্রামের ছোট ছোট ছেলে - মেয়েরা আগে থেকেই মেলায় খরচ করার জন্য তাদের পিতা - মাতার নিকট থেকে টাকা - পয়সা জমা করতে থাকে । এছাড়া আশপাশের কারিগরেরা মেলায় বিক্রির জন্য আগে থেকেই বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করতে থাকে ।

গ্রাম্য মেলার বর্ণনা :

গ্রাম্য মেলা একটি চিরন্তন ঐতিহ্য । এ মেলায় দূর - দূরান্ত থেকে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী নিয়ে দোকানদাররা আসে । মেলায় দোকানগুলো সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো থাকে । মেলায় কোথাও খেলনা , কোথাও ডালা - কুলা - চালুনি , কোথাও কাঠের জিনিসপত্র , কোথাও মাটির জিনিসপত্র , কোথাও ঘুড়ি এবং কোথাও খাবারের জিনিসের দোকান বসে । এছাড়া মেলার একপাশে নাগরদোলা ও সার্কাস বসে ।

কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে মেলায় হাজির হয় । কুটির শিল্পের অসংখ্য নমুনা এখানে আনা হয়ে থাকে । আশপাশের এলাকার বিভিন্ন শ্রেণির কারিগরেরা যেসব জিনিস তৈরি করে , তা তারা বিক্রয়ের জন্য মেলায় নিয়ে আসে । এভাবে সুন্দর সুন্দর জিনিসের সমারোহে সারা মেলা পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে । সেই সাথে থাকে মিষ্টি বিক্রয়ের আয়োজন । ছোট ছেলে - মেয়েদের জন্য থাকে নানারকম খেলার জিনিস । তাদের মুখের বাঁশির শব্দে চারদিক মুখরিত হয়ে ওঠে । মেলা উপলক্ষে আরও বিচিত্র আনন্দের উপহার এখানে সমবেত হয় । ছোট ছেলেমেয়েরা সেসব আনন্দ উপভোগ করে থাকে । মেলায় কিছু খেলাধুলার প্রতিযোগিতাও চলে যা দর্শকদের বিশেষ আনন্দ দেয় ।

মেলার তাৎপর্য :

গ্রামীণ জীবনে মেলার বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে । মেলা গ্রামের নিস্তরঙ্গ জীবনে অনাবিল আনন্দের উৎস হিসেবে উদ্যাপিত হয় । মেলা গ্রামীণ জীবনের প্রতিচ্ছবি । গ্রামের উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী , নানা শিল্পসার মেলায় প্রদর্শিত হয়ে গ্রামীণ জীবনের ছবি স্পষ্ট করে তোলে । গ্রামীণ জীবনের ঐতিহ্য রূপায়িত হয় গ্রাম্য মেলার মাধ্যমে । গ্রামের নানা খেলা ও আমোদ - প্রমোদের উপকরণ দেখতে পাওয়া যায় গ্রাম্য মেলায় । গ্রামকে চেনা যায় গ্রাম্য মেলার মাধ্যমে ।

মেলার আকর্ষণ :

মেলায় আসা বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী মেলার অন্যতম আকর্ষণ । এ মেলা উপলক্ষে বিক্রেতারা তাদের বিচিত্র দ্রব্যের সমাবেশ ঘটায় । এখানে কুটির শিল্পজাত এবং মৃৎশিল্প , তাল পাতার পাখা , কাগজের তৈরি রকমারি খেলনা , শীতল পাটি , নকশি কাঁথা ইত্যাদি নানা সামগ্রীর সমাবেশ ঘটে । মেলাকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে বাঁশের বাঁশি , চামড়ার ঢোল ইত্যাদি । এছাড়াও মেলায় উপভোগ করার মতো আছে সার্কাস , ম্যাজিক , যাত্রা , থিয়েটার ইত্যাদি বিনোদনমূলক উপাদান ৷

মেলার উপকারিতা :

গ্রাম্য মেলার অনেক উপকারিতা রয়েছে । আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে গ্রাম্য মেলা শুধু চিত্তের শান্তিই দেয় না , অর্থনৈতিক সচ্ছলতাও আনয়ন করে । মেলায় কৃষি ও কুটির শিল্পজাত দ্রব্যাদি বেচাকেনা হয় । মেলাকে কেন্দ্র করে গ্রামের কামার - কুমার , তাঁতী , সুতারদের মধ্যে বিভিন্ন জিনিস বানানোর হিড়িক পড়ে যায় । মেলার মাধ্যমে গ্রামীণ অনেক মানুষের কিছু উপার্জনের পথও প্রশস্ত হয় । এছাড়া সার্কাস ও যাত্রাদলসহ আরও অনেকেই মেলায় ব্যবসা করে থাকে । এতে করে বহুলোকের কিছুটা হলেও অনুসংস্থান হয় ।

মেলার অপকারিতা :

গ্রাম্য মেলার অনেক উপকারিতা আছে তা ঠিক , তবে এর কিছু কিছু অপকারিতাও রয়েছে । মেলায় বিচিত্র লোকের সমাগম ঘটে । জুয়া , চুরি , ডাকাতি , রাহাজানি , সন্ত্রাসীসহ বিভিন্ন অসামাজিক ও অন্যায় অবৈধ কাজ মেলায় সংঘটিত হয় । তাছাড়া , যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগের ফলে ভীষণ দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয় । ফলে পরিবেশ দূষিত হয় এবং নানারকম রোগের প্রাদুর্ভাব হয় । অনেক সময় পচা - বাসি খাবার খাওয়ার ফলে কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় ।

উপসংহার :

মেলা হচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পরিচায়ক । মেলার মাধ্যমে এক গাঁয়ের মানুষের সঙ্গে অন্য গাঁয়ের মানুষের পরিচয় ঘটে , ভাবের আদান - প্রদান হয় । সামান্য অপকারিতা থাকা সত্ত্বেও গ্রাম্যজীবনে এ মেলার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য । গ্রামীণ জীবনে মেলার তাৎপর্য বিবেচনা করে এর প্রতি মনোযোগ দিতে হবে যাতে তা সকলের কাছেই উপভোগ্য হয় ।


আরো পড়ুন: