স্বরধ্বনির পরিচয় | বাংলা ব্যাকরণ

স্বরধ্বনির পরিচয়

স্বরধ্বনির পরিচয় | বাংলা ব্যাকরণ

স্বরবর্ণের উচ্চারিত রূপই স্বরধ্বনি । এ ধ্বনি উচ্চারণে ফুসফুসতাড়িত বাতাস মুখের কোথাও বাধা না পেয়ে সরাসরি বেরিয়ে যায় । স্বরধ্বনিগুলাে অন্য কোনাে ধ্বনির সাহায্য ছাড়াই উচ্চারিত হতে পারে । তবে উচ্চারণের সময় এ ধ্বনির স্বর কখনাে হ্রস্ব ও কখনাে দীর্ঘ হয় । যে স্বরবর্ণগুলাে উচ্চারণের জন্য সময় কম লাগে সেগুলােকে হ্রস্বস্বর , আর যেগুলাে উচ্চারণের জন্য সময় বেশি লাগে সেগুলােকে দীর্ঘস্বর বলে । এখানে বিভিন্ন প্রকার স্বরধ্বনির পরিচয় দেওয়া হলাে:-

স্বরধ্বনিমূল

অবিভাজ্য স্বরধনিই হলাে স্বরধ্বনিমূল । অর্থাৎ যে স্বরধ্বনিকে বিশ্লেষণ করা যায় না বা যে স্বরধ্বনি অন্য কোনাে ধ্বনির ওপর নির্ভরশীল নয় তাকেই বলে স্বরধ্বনিমূল । বাংলা ভাষায় সাতটি স্বরধ্বনিমূল রয়েছে । এগুলাে হলো : অ , আ , ই , এ , ও , উ , অ্যা । তবে কথা বলার সময় আমরা কেবল এই সাতটি স্বরধ্বনিই উচ্চারণ করি না , আরও অনেক স্বরধ্বনি আমাদের উচ্চারণে যােগ হয় । কিন্তু ওই ধ্বনিগুলাে এই সাতটি মূল ধ্বনির কোনাে না কোনােটির উচ্চারণ বৈচিত্র্য হিসেবে গ্রাহ্য । তাই এই সাতটি স্বরধ্বনিকেই বাংলা ভাষার স্বরধ্বনিমূল বা স্বনিম হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় ।

আনুনাসিক স্বরধ্বনি

যে স্বরধ্বনি তালুর কোমল অংশের উঁচুও নয় , নিচুওয্ নয় এমন মাঝামাঝি অবস্থানের জন্য নাক ও মুখের মিলিত দ্যোতনা লাভ করে তাকে আনুনাসিক স্বরধ্বনি বলে । এ স্বরধ্বনি উচ্চারণের ক্ষেত্রে চন্দ্রবিন্দু প্রতীক বা চিহ্নের সাহায্যে আনুনাসিকতার দ্যোতনা সৃষ্টি করে । বাংলা ভাষার সাতটি স্বরধ্বনিমূল বা স্বনিমেরই আনুনাসিক রূপ রয়েছে । যেমন : অঁ , আঁ , ইঁ , এঁ , ওঁ , উঁ , অ্যাঁ । তাই আনুনাসিক স্বরধ্বনিগুলােকে ও ধ্বনিমূল বলা যায় । স্বরধ্বনিমূলের মতাে আনুনাসিক ধ্বনিও শব্দের অর্থের পার্থক্য ঘটায় । যেমন :

বাধা → বাঁধা
গাথা → গাঁথা
কুড়ি → কুঁড়ি
কাদা → কাঁদা

অর্ধস্বরধ্বনি

অর্ধস্বরধ্বনি স্বরধ্বনির মতাে স্বরিত নয় । উচ্চারণ প্রক্রিয়ার দিক থেকে এগুলােকে স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনির মধ্যবর্তী বলা যায় । অর্থাৎ এগুলাে উচ্চারণের সময় স্বর ও ব্যঞ্জন উভয় ধ্বনির প্রকৃতি গ্রহণ করে থাকে । কেননা শ্রুতিজনিত আওয়াজ ছাড়াই এগুলাে দ্রুত উচ্চারিত হয় । বাংলায় অর্ধস্বরধ্বনি চারটি । এগুলো হচ্ছে : ই , উ , এ ( য় ) এবং ও ।

দ্বিস্বরধ্বনি

পাশাপাশি অবস্থিত দুটো স্বরধ্বনি দ্রুত উচ্চারণের ফলে একটির মতাে শােনায় । দুটো স্বরধ্বনির প্রথমটি পুরাে উচ্চারিত হয় কিন্তু দ্বিতীয়টি হলন্ত অর্থাৎ আধাআধি উচ্চারিত হয় । এ হলন্ত বা হসন্ত স্বরধ্বনিটিকে বলে অর্ধস্বরধ্বনি । এভাবে একটি পূর্ণ স্বরধ্বনি এবং একটি অর্ধস্বরধ্বনি মিলে যে যুগ্ম ধ্বনিটি গঠিত হয় , তাকে বলা হয় দ্বিস্বরধ্বনি । একে সন্ধিস্বর , যৌগিক স্বরধ্বনি , যুগ্মস্বর , সান্ধ্যক্ষর ইত্যাদিও বলা হয় । দ্বিস্বরধ্বনির সংখ্যা নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে । ড . মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে , বাংলায় দ্বিস্বরধ্বনির সংখ্যা উনিশটি । ড . সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে , পঁচিশটি ; মুহম্মদ আব্দুল হাইয়ের মতে একত্রিশটি ; ড . পবিত্র সরকারের মতে সতেরােটি । শেষােক্ত মত অনুসারে এখানে সতেরােটি দ্বিস্বরধ্বনি উদাহরণসহ দেখানাে হলাে :

অ + এ = অয় [ হিয় ]
অ + ও = অও [ হিও ]
আ + ই আই [ ভাই ]
আ + উ = আউ [ লাউ ]
আ + এ = আয় [ গায় ]
আ + ও = আও [ গাও ]
ই + = ইই [নিই]
ই + উ = ইউ [ মিউ ]
উ + ই = উই [ রুই ]
এ + ই = এই [ এই ]
এ + উ = এউ [ ঢেউ ]
ও + ই = ওই [ বই ]
ও + উ = ওউ [ বউ ]
ও + এ= ওয় [ শােয় ]
ও + ও = ওও [ শোও ]
অ্যা + এ = অ্যায় [ দেয় ]
অ্যা + ও = অ্যাও [ শেওড়া ]