খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা রচনা

খেলাধূলার প্রয়ােজনীয়তা

এছাড়াও আরো যে বিষয় সম্পর্কে লিখতে পারবে:
👉জাতীয় জীবনে খেলাধুলা
👉খেলাধুলার প্রয়ােজনীয়তা ও জাতীয় জীবন
👉জাতীয় জীবনে খেলাধুলার গুরুত্ব

ভূমিকা:

সুস্থ দেহে সুন্দর মন কে - না চায় । ব্যক্তি ও জাতীয় পর্যায়ে সুস্বাস্থ্য সাফল্য লাভের অন্যতম হাতিয়ার । স্বাস্থ্যবান প্রজন্ম ছাড়া কোনাে জাতি কাঙ্ক্ষিত উন্নতির পথে ধাবিত হতে পারে না । কিন্তু সুস্বাস্থ্য বলতে শুধু নীরােগ শরীর বােঝায় না । মন যদি প্রফুল্ল না থাকে তাহলে যথার্থ সুস্বাস্থ্য আছে , বলা যাবে না । মানুষের দৈহিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য প্রয়ােজন নিয়মিত খেলাধুলা । নিয়মিত খেলাধুলা তথা শরীরচর্চা শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতার নিশ্চয়তা প্রদান করে ।

শারীরিক সুস্থতায় খেলাধুলা :

সুস্বাস্থ্যের জন্য নিয়মিত খেলাধুলার প্রয়ােজনীয়তা রয়েছে । ছােটবেলা থেকে খেলাধুলা ও দৌড় - ঝাপ শিশুর শারীরিক গঠনকে সুদৃঢ় করে । শারীরিক ক্রীড়াকৌশলের কারণে ছােটখাটো রােগব্যাধি মানুষের কাছে ঘেঁষতে পারে না । তাছাড়া দৈহিক পরিশ্রমের কারণে খেলাধুলাপ্রিয় মানুষের শরীরে রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় । খেলাধুলা আহার , নিদ্রা ও বিশ্রামের পরিমিত চাহিদা সৃষ্টি করে । ফলে মানুষের দৈহিক পরিপুষ্টি বৃদ্ধি পায় , শারীরিক অবসাদ দূর হয় , মস্তিষ্কের স্থবিরতা হ্রাস পায় এবং রােগমুক্ত জীবন নিশ্চিত করে ।

মানসিক সুস্থতায় খেলাধুলা :

আমাদের প্রাত্যহিক জীবন নানা সমস্যার বেড়াজালে আবদ্ধ । জীবনের নানা টানাপােড়েনে আমরা অধিকাংশ সময় থাকি মানসিকভাবে বিক্ষুব্ধ , অবসাদগ্রস্ত এবং বিরক্ত । এই মানসিক অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য প্রয়ােজন নির্মল বিনােদন । কিন্তু বর্তমান নাগরিক ও পল্লিজীবনে সুস্থ বিনােদনের বড়ই অভাব । চারপাশে দূষিত পরিবেশ , অপসংস্কৃতি এবং কুরুচির ছড়াছড়িতে আমরা যখন মুহূর্তের জন্য হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে চাই তখন একমাত্র খেলাধুলাই দিতে পারে নির্মল বিনােদনের প্রশান্তি । বিশ্বকাপ ক্রিকেট বা বিশ্বকাপ ফুটবল চলাকালে গােটা জাতিকেই মানসিকভাবে প্রফুল্লিত ও আনন্দঘন মনে হয় । অর্থাৎ ব্যক্তি থেকে জাতীয় পর্যায়ে মানসিক সুস্থতার জন্য খেলাধুলার চর্চা অপরিহার্য । স্ফূর্তিহীন আত্মা অচল , মস্তিষ্ক স্থবির ও চিন্তাশক্তি হয়ে পড়ে সংকুচিত । একমাত্র খেলাধুলাই আমাদের এই আত্মিক ফুর্তি তথা মানসিক সুস্থতা দিতে পারে ।

খেলাধুলা সম্পর্কে আমাদের দেশে ধারণা :

আমাদের দেশে খেলাধুলার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা লক্ষ করা যায় না । বরং একে মনে করা হয় অপ্রয়ােজনীয় সময়ক্ষেপণ বা উচ্ছৃঙ্খলতা হিসেবে । তারা ছেলেমেয়েদের গৃহকোণে আটকে রেখে পুঁথিগত বিদ্যা গলাধঃকরণ করানােকেই একমাত্র দায়িত্ব মনে করেন । সেজন্য আমাদের দেশের অধিকাংশ ছেলেমেয়ে শারীরিকভাবে অপরিপুষ্ট ও মানসিকভাবে পঙ্গুত্ব নিয়ে বেড়ে উঠছে । যা উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের জন্য একটি প্রদীপ্ত প্রজন্ম সৃষ্টির পথে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে । খেলাধুলার গুরুত্ব সম্পর্কে আমাদের দেশের অভিভাবকরা এই ইংরেজি প্রবাদটি স্মরণে রাখতে পারেন- “ All work and no play makes jack a dull boy .

খেলাধুলা ও ভ্রাতৃত্ববােধ :

মানুষে মানুষে ও জাতিতে জাতিতে কলহ আর বিবাদ - বিসংবাদ যখন আমাদের চারপাশে তিক্ততার পরিবেশ সৃষ্টি করেছে তখন খেলাধুলা শােনায় ভ্রাতৃত্ববােধের বিশ্বায়ত জয়গান । আমাদের দেশে দুটি বিপদমান এলাকার মাঝে কোনাে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ বা হা ডু - ডু খেলা এনে দেয় সম্প্রীতির পরশ । খেলাধুলাকে কেন্দ্র করে গােটা জাতি অভিন্ন আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠে । অলিম্পিক , বিশ্বকাপ ফুটবল বা বিশ্বকাপ ক্রিকেট বিশ্বভ্রাতৃত্ববােধকে উজ্জীবিত করে । এসব ক্রীড়া প্রতিযােগিতায় বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন বর্ণের ক্রীড়াবিদরা অংশ নেয় । বসে মিলন মেলা , সৃষ্টি হয় বিশ্বভ্রাতৃত্বের সুপবিত্র চেতনা । দুই বৈরী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালে সম্প্রতি গ্যালারিতে দর্শকদের হাতে যে প্লাকার্ড দেখা যায় তার অর্থ এরূপ- “ ক্রিকেট ঘৃণ্য রাজনীতির বলয় থেকে দুটি জাতিকে বন্ধুত্বের ছায়ায় আনতে পারে । ”

ছাত্রজীবনে খেলাধুলা :

ছাত্রজীবনে খেলাধুলার গুরুত্ব সর্বাধিক । বয়সের স্বভাবধর্ম তথা তারুণ্যের স্ফুরণ ঘটে খেলাধুলার মাধ্যমে । দেহ মনের সুস্থতা ছাড়া ছাত্রজীবনে সফলতা আসে না । আর এ সুস্থতা একমাত্র খেলাধুলাই আমাদের দিতে পারে । একঘেয়েমী ও নিরানন্দ পড়াশােনা যখন ছাত্রজীবনকে দুর্বিষহ করে তােলে তখন নিয়মিত ক্রীড়ানুশীলন দেহ - মনের ফুর্তি ফিরিয়ে দিতে পারে ।

খেলাধুলা ও অর্থোপার্জন :

আজকাল খেলাধুলার মাধ্যমে প্রচুর অর্থ উপার্জন করা যায় । মুষ্টিযুদ্ধ , টেনিস , ফুটবল , স্কোয়াশ , বাস্কেটবল , বেসবল , দাবা প্রভৃতি খেলার তারকা খেলােয়াড়দের বার্ষিক আয় প্রায় অবিশ্বাস্য । ফরমুলা ওয়ান ড্রাইভার প্রয়াত মাইকেল শুমাখারের বার্ষিক আয় ছিল ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার । আফ্রিকার দরিদ্র দেশ ঘানা , উগান্ডা , ক্যামেরুন , সেনেগাল , নাইজেরিয়া , মালি প্রভৃতি দেশের ফুটবলাররা বিদেশে খেলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে । আমাদের দেশের একজন ফুটবলারেরও বার্ষিক আয় ১৫-২০ লাখ টাকা ।

জাতীয় জীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা :

দেশ গড়ার জন্য প্রয়ােজন সুস্থ জনগােষ্ঠী । সুস্থ জাতি গড়তে খেলাধুলার নিয়মিত চর্চা ছাড়া অন্য কোনাে পথ নেই । খেলাধুলার মাধ্যমে যেকোনাে জাতি বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করতে পারে , বিশ্বদরবারে দাড়াতে পারে গর্বিত মাথা তুলে । ব্রাজিল , আর্জেন্টিনা , নাইজেরিয়া , ওয়েস্ট ইন্ডিজ , শ্রীলঙ্কা , পাকিস্তান , ভারতের মতাে দেশগুলাে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি ও সম্মান পেয়েছে শুধুমাত্র তাদের ক্রীড়াশৈলী দিয়ে । মাত্র কয়েক লাখ লােকের দেশ আরব আমিরাত বিশ্বকাপ ফুটবল খেলে প্রশংসা কুড়িয়েছে , বিন্দুর মতাে একটি ক্ষুদ্র দেশ সুরিনামকে বিশ্বব্যাপী মর্যাদা এনে দিয়েছিলেন সেদেশের সাঁতারে অলিম্পিক স্বর্ণ জয়ী নেস্টি । ক্রীড়াবিদগণ যেকোনাে জাতির পক্ষ থেকে বিদেশে শান্তিদূত হিসেবে প্রেরিত হন । নাইজেরিয়া , আর্জেন্টিনা , ঘানা প্রভৃতি দেশের ক্রীড়াবিদগণ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে । তাই জাতীয় জীবনে খেলাধুলার প্রয়ােজনীয়তা অপরিসীম ।

উপসংহার :

ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে খেলাধুলার গুরুত্ব অপরিসীম । অকাল বার্ধক্য থেকে মুক্তি দিয়ে খেলাধুলা জাতির প্রাণশক্তি বৃদ্ধি করে । তাই আমাদের একটি সুস্থ ও সমৃদ্ধ জাতি গড়ে তােলার জন্য নিয়মিত খেলাধুলার চর্চা করতে হবে ।


আরো পড়ুন: